কক্সবাজারের টেকনাফে বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহতের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে এ প্রতিবেদন জমা দেন কমিটির প্রধান, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। আদালত চাইলে এ তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হবে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
সিনহা হত্যার তদন্ত প্রতিবেদন পেয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যেহেতু বিষয়টি বিচারাধীন রয়েছে, তাই এই মুহূর্তে আমরা বিস্তারিত কিছু বলতে পারবো না। আদালত চাইলে আমরা এই প্রতিবেদন সেখানে হস্তান্তর করবো।’
তিনি বলেন, ‘রিপোর্টের ভেতরে কী আছে আমরা এখনো দেখিনি। এখন আমাদের সচিব এটা বিশ্লেষণ করে দেখবেন। আপনারা জানেন আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি তদন্ত চলছে। সেজন্য আমরা প্রকাশ্যে কিছু জানাতে পারব না। আমরা আদালতকে জানিয়ে দেব এ বিষয়ে। আদালত মনে করলে আমাদের কাছ থেকে অফিসিয়ালি নিয়ে যাবেন। এটা আদালতের এখতিয়ার।’
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘মেজর সিনহা হত্যাকাণ্ড একটি দুঃখজনক ঘটনা। আমরা চাই, এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে।’ এ হত্যাকাণ্ডে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সম্পর্কে ফাঁটল ধরেনি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পুলিশ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে চমৎকার পরিবেশ ও সম্পর্ক রয়েছে। ঘটনার পর দুই বাহিনীর প্রধান একসঙ্গে সংবাদ সম্মেলন করে তাদের বক্তব্য দিয়েছেন।’
এ সময় মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৬৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জবানবন্দি নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘পুলিশ বাহিনী অক্লান্ত পরিশ্রম করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। এই ঘটনাটি কোনোভাবেই তাদের কাজকে ম্লান করে দেবে না।’
গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। গত ১ আগস্ট সিনহা হত্যার তদন্তে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটিতে সদস্য করা হয় কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. শাজাহান আলি, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. জাকির হোসেন এবং সেনাবাহিনীর রামু-১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজার এরিয়া কমান্ডারের প্রতিনিধি লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সাজ্জাদকে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত এ তদন্ত কমিটি গত ৩ আগস্ট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে। কমিটিকে সরেজমিনে তদন্ত করে সিনহা হত্যার কারণ, উৎস, ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে করণীয়সহ সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে সুস্পষ্ট মতামতসহ চিঠি পাওয়ার সাত কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।পরে তিন দফায় সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু এর মধ্যে টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে না পারায় কমিটি প্রতিবেদন দিতে আরও সাত দিনের সময় চাইলে তা ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর ওসি প্রদীপকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তদন্ত কমিটি।
Leave a Reply